ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে হরিণসহ মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রাণী, তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চকরিয়ার উপজেলার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রতিনিয়ত মরছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। হাতি, বাঘ, হরিণ, কুমিরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর অকাল মৃত্যু এখানকার নিত্য নৈমেত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি কুমির, হরিণ মারা যাওয়ার ঘটনা তার স্পষ্ট প্রমাণ। প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে এমন ছবি ও তথ্য। ঘটনার জন্য পার্কে দায়িত্বরতদের দায়ী করছে এলাকাবাসী।
এদিকে, প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে দায়িত্বরতরা। সে জন্য গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পরিচিত কাউকে পার্কে ঢুকতে দেয়া হয়না। গত কয়েকদিন ধরে খুব কড়াকড়ি চলছে। এমনকি দর্শণার্থীদের টিকিট বিক্রিতেও খুব সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মূলতঃ নিজেদের অপরাধ যাতে বাইরে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষের-এমনটি স্থানীয়দের অভিমত।
স্থানীয় সংবাদকর্মী মোঃ নিজাম উদ্দিন সিবিএনকে মুঠোফোনে অভিযোগে জানান, বেড়াতে আসা পর্যটকের মাধ্যমে জানতে পারেন, পার্কের ভেতর দুটি হরিণ মরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
খবর পেয়ে তিনি বুধবার (২৩ জানুয়ারী) দুপুরে পার্কে ঢুকতে চাইলে বাধা দেয় গেইটম্যান। পার্কে ঢুকতে ‘উপরের নিষেধ আছে’ জানিয়ে সংবাদকর্মী মোঃ নিজাম উদ্দিনকে কর্তব্যে বাধা দেয়া হয়।
কি কারণে, কার নির্দেশে ঢুকা ভেতরে যাবেনা? জানতে চাইলে গেইটম্যান মো. ইব্রাহীম উত্তর দেয়, ‘সাংবাদিক প্রবেশে মাজহার স্যারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ওনি এখন খুব কড়া!’
এরপর কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামকে ফোন করা হয়। তার মুঠোফোনে বারবার কল পড়লেও ওপার থেকে কোন সাড়া শব্দ মেলেনি।
অবশেষে সংবাদকর্মী মোঃ নিজাম উদ্দিন দর্শণার্থীর মতো কাউন্টার থেকে নির্ধারিত মূল্যে টিকিট সংগ্রহ করে পার্কে ঢুকেন। নিজ চক্ষে দেখেন সব দৃশ্য। ক্যামেরায় ধারণ করেন।
তিনি জানান, পার্কে প্রবেশ করে পর্যটকের দেওয়া সংবাদের সত্যতা মিলে। দেখতে পান একটি শিশু হরিণ লেকের পানিতে মরে ভাসছে। তার পাশে একটি মাদার হরিণ বেষ্টনির সাথে গেঁথে রাখা হয়েছে। বাতাসে পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মরা হরিণটি অন্তত ৩দিনের হতে পারে বলে দর্শণার্থীরা জানিয়েছে।
স্থানীয় একটি সুত্রে জানা গেছে, গত দুই-তিন দিন পূর্বে আরো দুটি হরিণ ও একটি কুমির মারা যায়। পার্ক কর্তৃপক্ষ গোপনে মৃতদেহগুলো মাটি পোতে ফেলেন। সংঘবদ্ধ চোরচক্রের ধাওয়ায় পালাতে গিয়ে হরিণগুলো মারা পড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুত্র মতে, বিগত কয়েক বছরে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে রেকর্ড সংখ্যক বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। তবু কার্যকর পদক্ষেপ নেই পার্ক নিয়ন্ত্রকদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরুতে দেশ-বিদেশে সুনাম ছড়িয়ে পড়লেও বর্তমান পার্ক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট নয় দর্শকেরা। নতুন কোন আকর্ষণ নেই, বরং যা আছে তার রক্ষণাবেক্ষণ নেই। পার্কের পশুপাখি সঠিকভাবে তদারক করা হয়না। দর্শণার্থীদের সাথেও আগের মতো সৌজন্যমূলক আচরণ করেনা কর্মরতরা। গাফেলতি রয়েছে পার্ক ইজারাদাতাদের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, চোরের সাথে হাত মিলিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে পার্কের হরিণ শিকার করা হয়। বন্দুক ও হরিণের মাংসসহ চোর আটক করলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়না। বরং দফায়রফায় চোরদের গোপনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিট কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে একই স্থানে কর্মরত। সেকারণে তার কাছে পার্ক গুরুত্বহীন।
ইতিপূর্বে এসব অনিয়ম দুর্নীতির অভিযুক্ত বিট কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও তৎকালীন ডিএফও গোলাম মওলা তার অপরাধের ধামাচাপা দেন।
এ বিষয়ে জানতে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে কর্মরত বিট কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামকে বেশ কয়েবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
এরপর এ বিষয়ে জানতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বরত ডিএফও আবু নাছের মোঃ ইয়াসিন নেওয়াজকে ফোন করলে তিনি ঘটনাটি যত দ্রুত সম্ভব খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

পাঠকের মতামত: